জানা-অজানা

এক তরুণীর করুণ কাহিনী

এক তরুণীর করুণ কাহিনী - West Bengal News 24

ব্রিটেনের তরুণী শার্লট এভান্সের বয়স যখন ১২ তখন হঠাৎ করেই তার শরীরের কোন কোন অংশ ফুলে যেতে শুরু করে। আর এই ফোলা ভাব থাকে মাসের পর মাস। এখন তার বয়স ১৯। এরই মধ্যে তার ফুলে যাওয়া অংশের চিকিৎসা করাতে গিয়ে ৬৬ বার অপারেশন হয়েছে। একবার তার একটি পা কেটে ফেলারও উপক্রম হয়েছিল।

ব্রিটেনের এই তরুণী তার অসুস্থতা ও অপারেশন সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়েছেন সংবাদ মাধ্যম বিবিসিকে। পাঠকদের জন্য তা তুলে দেওয়া হলো:

তরুণী শার্লট এভান্স জানান, ‘ছোটকালে আমার কোন সমস্যাই ছিল না। আমি নাচতে ভালবাসি। প্রায় প্রতিদিনই আমি নাচতাম। থিয়েটারেও নাচের অনুষ্ঠান করতাম। তারপর হঠাৎ করেই আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। একদিন নিতম্বে প্রচণ্ড ব্যথা নিয়ে ঘুম ভেঙে যায়। নিতম্বে ভেতরের এক জায়গায় বিচির মত কিছু একটা অনুভব করি। ব্যথা বাড়তে থাকলে হাসপাতালে যাই। সেখানে একসময় টের পাই আমার সব আঙুল ঠাণ্ডা হয়ে আসছে। ডাক্তাররা এটা দেখে বলে আমার ‘কম্পার্টমেন্ট সিনড্রোম’ হয়েছে।

এ সম্পর্কে ডাক্তাররা জানান সাধারণত শরীরে ব্যথা পেলে এটা হয়। কিন্তু আমার কেন এটা হচ্ছে সে ব্যাপারে তারা কোন কারণ দেখাতে পারেননি।

হাত এবং পায়ের মাংসপেশিগুলো বিশেষ এক জায়গায় ফ্যাসিয়া নামের একধরনের কোষ দিয়ে আটকানো থাকে। এই জায়গাগুলোকে বলে কম্পার্টমেন্ট। কোন কারণে এই কম্পার্টমেন্টের ওপর চাপ বেড়ে গেলে ‘অ্যাকিউট কম্পার্টমেন্ট সিনড্রোম’ দেখা দেয়। হাসপাতালে ফ্যাসিওটমির মাধ্যমে এর চিকিৎসা করা হয়। মূলত জায়গাটিতে কেটে ফুটো করে চাপ কমানোর ব্যবস্থা করা হয়।

এই পর্যায়ে আমার শরীরে প্রথমবার অপারেশন করা হয়। তারা আমার মাংসপেশি কেটে ফুটো করে এবং কয়েকদিন ধরে সেই ফুটো খুলে রাখা হয়। এরপর চাপ কমে গেল সেই কাটা জায়গা জুড়ে দেয়া হয়। ওই অপারেশনের পর থেকে আমার সমস্যাও বাড়তে থাকে।

একবার আমাকে একটানা সাত মাস হাসপাতালে থাকতে হয়েছিল। এসময় আমার মা অসাধ্যসাধন করেছেন। তিনি টানা সাত মাস হাসপাতালের চেয়ারে রাতে ঘুমিয়েছেন।

হাসপাতালের শিশু বিভাগে যে সময়টুকু ছিলাম তখন মনে হতো ডাক্তাররা আমার জন্যে তেমন কিছু একটা করছেন না। এরপর তারা আমাকে বলতে থাকলেন আমার আসলে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু তখনও আমার শরীরের বিভিন্ন জায়গা বার বার করে ফুলে উঠছিল।

আরও পড়ুন : মহিলারা কেন আবেদনময় সেলফি তোলেন? জানাল গবেষণা

আমাকে দ্রুত বড় হয়ে উঠতে হচ্ছিল। আমার বয়সীদের সাথে মেলামেশায় অসুবিধা হচ্ছিল। আমার অভিজ্ঞতাও ছিল কম। আমার বয়সের টিনএজাররা যা কিছু করে আমি তার কিছুই করিনি। শেষপর্যন্ত আমাকে যখন হাসপাতালে বড়দের ওয়ার্ডে সরিয়ে নেয়া হলো তখন পরিস্থিতির কিছুটা বদল ঘটলো। এর কারণ, ডাক্তাররা আমাকে নিয়ে নানা ধরনের পরীক্ষা চালানোর সুযোগ পেলেন।

স্কুলের ক্লাসে আমার উপস্থিতির হার ছিল ৪০ শতাংশ। আমার হাইস্কুল ফাইনাল পরীক্ষা আমি দিয়েছিলাম হাসপাতালের বেডে বসে। দ্বাদশ শ্রেণির প্রথম পরীক্ষাটি হয় আমার অপারেশনের ঠিক পর পর। মনে আছে, বেদনা-নাশক ওষুধ মরফিন পাম্প করতে করতে আমি ওই পরীক্ষা দিয়েছিলাম। এখন মনে হয় এতে আমার ভালই হয়েছিল। মরফিনের ফলে আমার পরীক্ষা নিয়ে কোন মানসিক চাপ ছিল না এবং সবগুলো বিষয়ে ভাল ফল করে আমি পরীক্ষায় পাস করেছিলাম।

এক তরুণীর করুণ কাহিনী - West Bengal News 24

২০১৯ সালের মার্চ মাসে আমার পা আবার ফুলে যায়। নিয়মিত চিকিৎসার জন্য আমি আবার হাসপাতালে ভর্তি হই। একদিন একজন ডাক্তার আমার বেডের পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় জিজ্ঞেস করলেন আমি কেমন আছি। উত্তরে আমি চাদর সরিয়ে বললাম, ‘আমার পায়ের অবস্থা এরকম। পায়ে কোন পালস্ নেই।’

দেখে ওই ডাক্তার বললেন, অনেক দেরি হয়ে গেছে। আমার পায়ের রঙ কালো হয়ে গেছে। তাই পা‌টা কেটে ফেলতে হবে। এরপর আমাকে অজ্ঞান করে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি ভেবেছিলাম জ্ঞান ফেরার পর আমি আর পা দেখতে পাবো না। কিন্তু জ্ঞান ফিরে দেখি পা তার জায়গাতেই আছে। আমি তো খুব খুশি।

ডাক্তাররা আমাকে বলল, পায়ের পালস্ ফিরে এসেছিল বলে তারা আর অ্যামপিউট করেনি। আর এক ঘণ্টা দেরি হলো পাটা কেটেই ফেলতে হতো।

প্রতিবার অপারেশনের পর আমার শরীরে কাটা দাগের সংখ্যা বাড়তে থাকে। লোক মনে করে আমার মানসিক সমস্যা রয়েছে বলে আমি নিজেই নিজের দেহ কেটে ফেলি। মানসিক সমস্যা রয়েছে মনে করে ইউনিভার্সিটিতে সহপাঠীরাও আমার সাথে কথা বলতো না।

এখন আমার নতুন চিকিৎসা শুরু হয়েছে। এই প্রথম নতুন ওষুধে কিছু ফল হচ্ছে। ফুলে যাওয়ার ঘটনাও আগের চেয়ে কিছুটা কমেছে। কিন্তু আমার সমস্যাটা ঠিক কোথায় তা ডাক্তাররা এখনও ধরতে পারছেন না। এই ওষুধ কেন এবং কীভাবে কাজ করছে তারা সে ব্যাপারেও নিশ্চিত হতে পারছেন না।

সমস্যা শুরু হলে আমি বাসাতেই থাকি। তা না হলে আমাকে সারা জীবন হাসপাতালেই কাটাতে হবে। পরিস্থিতি খুব খারাপ না হলে বা অপারেশন করার প্রয়োজন না হলে হাসপাতালে যাই না। বাসায় নড়াচড়া করার ব্যাপারে মা আমাকে সাহায্য করেন।

একটু একটু করে আমি বুঝতে পেরেছি যে দুনিয়ায় অনেক মানুষ আছে যাদের রোগের কারণ জানা যায় না। এটা মেনে নেয়া খুব কঠিন। কারণ এই সমস্যার জন্য নিজেকে লুকিয়ে রাখতে হচ্ছে। অনেক সময় আমার সমস্যার কথা ডাক্তাররা বিশ্বাসও করতে চান না। তখন রাগ লাগলেও সেটা দমন করতে হয়, নিজেকে প্রমাণ করতে হয়। সেটা না করা হলে তারা হয়তো বলবেন, আমার মানসিক চাপই এই রোগের কারণ।

তারপরও আমি আশায় বুক বেধে আছি, হয়তো একদিন আমি সেরে উঠবো।’

আরও পড়ুন ::

Back to top button

দয়া করে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপনের অনুমতি দিন

দেখে মনে হচ্ছে আপনি কোনও বিজ্ঞাপন ব্লকার ব্যবহার করছেন। আমরা বিজ্ঞাপনের উপর ভরসা করি ওয়েবসাইটের ফান্ডের জন্য