জানা-অজানা

ভোগবিলাসে মত্ত রানির কারণেই ফ্রান্স হয় ফকির, ঘটে ‘ফরাসি বিপ্লব’

ভোগবিলাসে মত্ত রানির কারণেই ফ্রান্স হয় ফকির, ঘটে ‘ফরাসি বিপ্লব’ - West Bengal News 24
ছবি মেরি অ্যান্টনিয়েট

ফ্রান্সের শেষ রানি তিনি। তার নাম মেরি অ্যান্টনিয়েট সৌন্দর্যপিপাসু এই নারী কখনো একটি পোশাক দুইবার পড়েননি। তার রূপের সুনাম ছিল বিশ্বজোড়া।
সম্প্রতি এই রানির এক জোড়া সিল্কের জুতার সন্ধান মিলেছে। যার মূল্য হাঁকা হচ্ছে ১০ হাজার ইউরো অর্থাৎ ১০ লাখ সাড়ে তিন হাজার টাকা। এই জুতা জোড়া রানি প্রতিদিনই পায়ে পরতেন, শুধু প্রাসাদের মধ্যে।

এ তো গেল জুতার কথা। রানি এতোটাই সৌন্দর্যপিপাসু ছিলেন যে, তিনি এক পোশাক কখনো দ্বিতীয়বার পরতেন না। ধারণা করা হয়, রানির পোশাকের জন্য বছরে যে পরিমাণ অর্থ খরচ হত, তার বর্তমান বাজারমূল্য দাঁড়ায় প্রায় ৪০ লাখ মার্কিন ডলার।

সেসময় ফ্রান্সে শরীরের চামড়ার উপরে দৃশ্যমান রক্তের শিরাকে নীল রঙে রাঙানো হত। তখনকার জনপ্রিয় এই ফ্যাশনের অনুসারীও ছিলেন রানি মেরি। তখন ফ্রান্সের নারীদের মাঝে কে কতটা কৃশকায় হতে পারে তাও একটা ফ্যাশনে রূপ নিয়েছিল।

ভোগবিলাসে মত্ত রানির কারণেই ফ্রান্স হয় ফকির, ঘটে ‘ফরাসি বিপ্লব’ - West Bengal News 24
রানির জুতা

তারা নিজেদের শিরাগুলোকে নীল রঙের পেন্সিল দিয়ে আঁকতেন। এর মাধমে নিজেদেরকে মেদহীন ও আকর্ষণীয় দেখানোর চেষ্টা করা হত। এ সবই পুরুষদের আকৃষ্ট করার জন্য তারা করতেন।

রানি সম্পর্কিত আরেকটি মজার বিষয় হলো, তখনকার সময় ইউরোপীয়রা বিশ্বাস করত গোসল করা একটি অস্বাস্থ্যকর বিষয়। যদিও প্রতিদিন তার পোশাক পরিবর্তন করতেন। তিনি ছিলেন অন্যদের চেয়ে অনেকটাই আলাদা।

ফ্রান্সের রাজা চতুর্দশ লুইয়ের মতোই স্পেনের রানি ইসাবেলাও জীবনে মাত্র দু’বার গোসল করেছিলেন। ফরাসি আন্দোলনের পূর্বে ফ্রান্সের সর্বশেষ রানি মেরি-অ্যান্টোয়নেট গোসল করতেন মাসে একবার।

মেরি অ্যান্টনিয়েট পরিচিতি

মেরি অ্যান্টনিয়েট ১৭৫৫ সালের ২ নভেম্বর অস্ট্রিয়া ভিয়েনায় হফবুর্গ প্যালেসে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হাবসবুর্গ সাম্রাজ্যের শাসক সম্রাজ্ঞী মারিয়া তেরেসা ও পবিত্র রোমান সম্রাট প্রথম ফ্রান্সিসের ছোট কন্যা। তার ধর্মপিতা হলেন প্রথম জোসেফ এবং ধর্মমাতা হলেন মারিয়ানা ভিক্টোরিয়া। তারা পর্তুগালের রাজা ও রানী।

মেরি অ্যান্টনিয়েট তার তিন বছরের বড় বোন মারিয়া কারোলিনার সঙ্গে ফ্রান্সের রাজবাড়িতে বেড়ে ওঠেন। ফ্রান্সের সম্রাট ষোড়শ লুই-এর সঙ্গে মেরির বিয়ে হয়। ষোড়শ লুইয়ের সঙ্গে বিয়ের পর তিনি হন ফ্রান্সের কুইন কনসর্ট।

ভোগবিলাসে মত্ত রানির কারণেই ফ্রান্স হয় ফকির, ঘটে ‘ফরাসি বিপ্লব’ - West Bengal News 24
রানি

প্রথমে ফরাসি জনগণের প্রিয় হলেও রানি তার চারিত্রিক কারণে সবার অপ্রিয় হয়ে ওঠেন। তিনি প্রচুর অর্থ খরচ করতেন এবং বহুগামী ছিলেন। অলংকার, পোশাক, জুয়া, ঘোড়দৌড় বাজি, প্রভৃতিতে তার অঢেল খরচের কাহিনী রয়েছে। এককথায় তিনি ছিলে ভোগবিলাসী। তার যখন যা মনে হত তিনি তাই করতেন।

ভোগবিলাসেই আজীবন মত্ত ছিলেন রানি

এক হিসাবে বলা হয়, রানি মেরি অ্যান্টনিয়টের নিজস্ব সহচরীর সংখ্যা ছিল ৫০০। রাজা, রানী, রাজকুমার ও রাজকুমারীদের প্রমোদভ্রমণের জন্য রাজদরবারে প্রায় দুই হাজার ঘোড়া ও ২০০ অশ্বশকট সব সময়ের জন্য প্রস্তুত থাকত। এসব বিষয় ফরাসি জনগণের মধ্যে দারুণ ক্ষোভের সঞ্চার করেছিল।

এরপর ১৭৮৯ সালের ৫ অক্টোবর প্যারিস থেকে নারীদের ভুখামিছিল বা হাঙ্গার মার্চ অব দ্য ওমেন শুরু হয়। তারা ভার্সাই রাজপ্রাসাদের কাছে পৌঁছে রুটির দাম কমানোর দাবি জানায়। তখন রানি মেরি অ্যান্টনিয়েট অবাক হয়ে মিছিলের দিকে তাকিয়ে জানতে চান, এরা কী চায়?

তার সহচরী উত্তর দেন, এরা রুটির দাম কমাতে বলছে, রুটি চায়। রানি অবাক হয়ে বললেন, রুটি কেন? এরা কেক খেতে পারে না! প্রকৃতপক্ষে রাজপ্রাসাদের অভ্যন্তরে বিলাস জীবনযাপন করে রানি নিজ দেশের সাধারণ মানুষের জীবন সম্পর্কে কিছুই জানতে পারেননি।

ভোগবিলাসে মত্ত রানির কারণেই ফ্রান্স হয় ফকির, ঘটে ‘ফরাসি বিপ্লব’ - West Bengal News 24
রাজা ও রানিকে হত্যা করে ফরাসিরা

রানি হয়েও দেশের মানুষের কথা তিনি কখনো ভাবেননি। ইতিহাসবিদদের মতে, তার কারনেই ফ্রান্স ফকির হয়, শুরু হয় ফরাসি বিপ্লব। ষোড়শ লুই ও তার স্ত্রী মেরি অ্যান্টনিয়েটকে ঘিরেই শুরু হয় ফরাসি বিপ্লব। রাজা ও রানির স্বৈরাচারিতা, বিলাসিতা ও রাষ্ট্র পরিচালনায় দুর্নীতি পুরো রাজপরিবারকে সাধারণ জনগণের প্রতিপক্ষ করে তোলে।

বিদ্রোহীদের কাছে শেষ পর্যন্ত বন্দী অবস্থায় উপনীত হন রাজা ষোড়শ লুই। ক্ষমতা হারানোর সুবাস পেতে শুরু করেন। ১৭৯৩ সালের ২১ জানুয়ারি শতসহস্র জনতার সম্মুখে রাজা ষোড়শ লুইসকে গিলোটিনে শিরোচ্ছেদ করা হয়।

অন্যদিকে রানিকেও বিচারের মুখোমুখি হতে হয়। ফ্রান্সের এই রানিকে বিলাসিতার জন্য অনেকেই অপছন্দ করতেন। সেইসঙ্গে দুর্নীতির কলকাঠি আড়ালে থেকে তিনিই নাড়তেন বলে জনগণের অভিযোগ ছিল। বিচারের পর ১৬ অক্টোবর রানিকেও একই শাস্তি কার্যকর করা হত্যা করা হয়।

 

আরও পড়ুন ::

Back to top button

দয়া করে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপনের অনুমতি দিন

দেখে মনে হচ্ছে আপনি কোনও বিজ্ঞাপন ব্লকার ব্যবহার করছেন। আমরা বিজ্ঞাপনের উপর ভরসা করি ওয়েবসাইটের ফান্ডের জন্য