ঝাড়গ্রাম

মনের জোরে স্বাবলম্বী ঝাড়গ্রামের মুনুদি

স্বপ্নীল মজুমদার

মনের জোরে স্বাবলম্বী ঝাড়গ্রামের মুনুদি - West Bengal News 24

ঝাড়গ্রাম: হাঁটাচলা করতে পারেন না। অশক্ত পায়ে দাঁড়ানোর ক্ষমতা নেই। কিন্তু মনের জোরেই দোকান চালান ঝাড়গ্রামের আগুইবনি অঞ্চলের বড়পাল গ্রামের মুনুদি। এই নামেই এলাকার সবাই তাঁকে চেনেন। বছর ছেচল্লিশের মুনুর পোশাকি নাম অষ্টমী মাহাতো। জন্ম থেকে তাঁর দু’টি পা বাঁকা ও অশক্ত। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন অষ্টমী হাঁটাচলা করতে পারেন না। প্রতিটি মুহূর্তে অন্যের সাহায্য নিয়ে কাজকর্ম করতে হয় তাঁকে। কিন্তু তা বলে অষ্টমী হাল ছাড়েননি। প্রতিদিন গ্রামের অদূরে বিরিহাঁড়ি হাইস্কুলের কাছে রাস্তার ধারে পান ও খাবারের দোকান চালান অষ্টমী।

সকাল থেকে সন্ধ্যে পর্যন্ত উবু হয়ে বসে কখনও পান সাজেন। কখনও চা বানিয়ে গেলাস এগিয়ে দেন খদ্দেরের দিকে। এ ভাবেই দাদা-ভাইপোর সংসারে আশ্রিত অষ্টমী নিজের চেষ্টায় হয়ে উঠেছেন স্বাবলম্বী। ছয় দাদার পরে একমাত্র কন্যা সন্তান অষ্টমী বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন হওয়ায় মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল তাঁর বাবা-মায়ের। স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের পাঠ চুকিয়ে বিরিহাঁড়ি স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন অষ্টমী। তখন কোনও মতে লাঠিতে ভর দিয়ে হাঁটতেন। পরে একেবারেই হাঁটাচলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেন। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে বাবা রমানাথ মাহাতোর মৃত্যু হয়। অষ্টম শ্রেণির পরে অষ্টমীর পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়।

আরও পড়ুন : মমতা ক্ষমতায় আসলে আরেকটি কাশ্মীর হবে পশ্চিমবঙ্গ

বছর দু’য়েক পরে মায়েরও মৃত্যু। অথৈ জলে অষ্টমীকে পড়তে দেননি তাঁর ছোড়দা কিশোরীমোহন মাহাতো। গ্রামের কেউ কেউ বলেছিলেন অষ্টমীর বিয়ে দিয়ে দিতে। কিন্তু বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন অষ্টমীকে কে-ই বা বিয়ে করবে! কিশোরীমোহন তাই বোনকে নিজের কাছেই রেখে দেন। সামান্য চাষে সংসার চলে না-বলে দোকানটি খুলেছিলেন অষ্টমীর বাবা রমানাথ। রমানাথের মৃত্যুর পরে অষ্টমীর দাদা কিশোরীমোহন দোকানটি চালাতেন। পরে অষ্টমী দোকানটি পুরোদস্তুর চালাতে শুরু করেন। প্রায় তিন দশক ধরে দোকান চালাচ্ছেন অষ্টমী। এখন ভাইপো অপূর্ব মাহাতো কিংবা অপূর্বের স্ত্রী সোমা স্কুটিতে করে অষ্টমীকে সকালে দোকানে পৌঁছে দেন। আবার সন্ধ্যায় ফিরিয়ে নিয়ে যান।

দুপুরে খাবার পৌঁছে দেন অষ্টমীর বৌদি পুতুল মাহাতো। আগে দোকানটি ছিল মাটির। এখন অষ্টমীর চেষ্টায় অ্যাসবেসটসের ছউনি দেওয়া ইঁটের গাঁথনির দোকান হয়েছে। তবে দরজা-জানালা কিছুই নেই। রোজ জিনিসপত্র এনে ব্যবসা করেন অষ্টমী। দোকানে চা ও পান ছাড়াও পাওয়া যায় কেক, বিস্কুট, নারকেল নাড়ু, কাঠি গজা, নিমকি। বৌদি ও বৌমার সাহায্যে বাড়িতে নাড়ু, গজা, নিমকি তৈরি করেন অষ্টমী। অষ্টমী বলেন, ‘‘দাদা-বৌদি, ভাইপো ও বৌমা সাহায্য করে বলেই রোজ দোকান চালাতে পারছি।”

অষ্টমীর ভাইপো অপূর্ব বলেন, ‘‘পিসির মনের জোর দেখে আমরা অবাক হয়ে যাই। গ্রীষ্ম-বর্ষা-শীত কোন বাধা হয় না। রোজ পিসি দোকানে যাবেনই।’’ অষ্টমী বলেন, ‘‘শরীরের বাধার জন্য মনকে কখনও দুর্বল হতে দিইনি। রোজ দোকানে পথচলতি কত মানুষ আসেন। স্কুলের শিক্ষকরাও আসেন। এই দোকানই আমার ভাল থাকার ওষুধ।’’ অষ্টমীর বিশেষ কোনও চাহিদা নেই। জানালেন, সরকার যদি তাঁদের পরিবারের জন্য বাড়ি করে দেয় তাহলে ভাল হয়। দাদার টালির ছাদের মাটির বাড়িতে এতগুলো মানুষের থাকতে খুবই সমস্যা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত আগুইবনি পঞ্চায়েত থেকে আবাস যোজনার সরকারি বাড়ি পাননি অষ্টমী।

আরও পড়ুন ::

Back to top button