আন্তর্জাতিক

যে কারণে আফগানিস্তান নিয়ে চীনের এত ‘আগ্রহ’

যে কারণে আফগানিস্তান নিয়ে চীনের এত ‘আগ্রহ’ - West Bengal News 24

দিন দশেক আগে কাবুলের পতনের মধ্য দিয়ে আফগানিস্তানের দখল নিয়েছে তালেবান। প্রাণ নিয়ে পালিয়েছেন দেশটির মার্কিন সমর্থনপুষ্ট প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি।

তবে একরকম বিনা রক্তপাতেই কাবুল দখলে নিয়েছে তালেবান যোদ্ধারা। দখলে নিয়েই সবাইকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেছে।

আন্তর্জাতিক ভূ-রাজনীতি বিশ্লেষকদের মতে, তালেবানের এই পুনরুত্থানে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে চীন ও পাকিস্তান।

যদিও অতীতে আফগান ইস্যুতে চীনের সম্পৃক্ততা ছিল না। কিন্তু হঠাৎ করেই দেখা গেল, আফগানিস্তান বিষয়ে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছে চীন। তালেবানের সঙ্গে চীনের সখ্যতাও বেশ পরিলক্ষিত। কাবুল পতনের আগে তালেবানের প্রতিনিধিদের চীন সফর করতে দেখা গেছে। তালেবানদের প্রভাবশালী ব্যক্তি মোল্লা আবদুল গনি বারাদার গত ২৮ জুলাই চীনের তিয়ানজিংয়ে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-র সঙ্গে দ্বীপক্ষীয় বৈঠক করেন বলে ওই সময় চীনের পররাষ্ট্র দপ্তরের পক্ষ থেকে জানানো হয়। এছাড়া চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের আফগান ত্যাগের আগে থেকেই তালেবান বেইজিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়।

আরও পড়ুন : ফিলিস্তিনি শিশুকে মাথায় গুলি করে হত্যা করল ইসরাইলি সেনারা

তালেবানদের মুখপাত্র সোহাইল শাহীন ১৯ আগস্ট সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, আফগানিস্তানে শান্তি আনতে চীন গঠনমূলক ভূমিকা রেখেছে; একই সঙ্গে দেশ পুনর্গঠন ও উন্নয়নে চীন উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে।

আফগানিস্তান বিষয়ে প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তানের সম্পর্কটি বেশ পুরনো, যা বর্তমানেও বিদ্যমান। তবে চীন কেন হঠাৎ করে দেশটির বিষয় এতো আগ্রহ দেখাচ্ছে?

সে বিষয়ে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক বিশ্লেষণ বলছে, এর নেপথ্য কারণ আফগানিস্তানের খনিজ সম্পদ। শেষ করে লিথিয়ামের বিপুল মজুত দেশটির ব্যাপারে চীনকে আগ্রহী করে তুলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। চীন ইলেকট্রিক যানবাহন তৈরির বিষয়ে জোর দিচ্ছে। এই যানবাহনের অন্যতম প্রধান উপকরণ লিথিয়াম। পাশাপাশি চীনের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক রাজনীতির নতুন প্রেক্ষাপট আফগানিস্তানের ব্যাপারে বেইজিংকে আগ্রহী করে তুলেছে।

যুদ্ধবিধ্বস্ত এই আফগানিস্তানের মাটির নিচেই রয়েছে রাশি রাশি ‘গুপ্তধন’, যা অল্প সময়েই ঘুরিয়ে দিতে দেশটির অর্থনীতির চাকা।

আরও পড়ুন : কাজে যেতে হবে না, বাড়িতে বসে বেতন পাবেন নারীরা: তালেবান

সূত্র জানায়, আফগানিস্তানের মাটির অভ্যন্তরে ১ লাখ কোটি ডলার মূল্যের ‘গুপ্তধন’ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম খনিজ লিথিয়াম মৌল। দূষণহীন যান চলাচলের ব্যাটারি, মোবাইল ফোনের ব্যাটারির জন্য এ খনিজ আধুনিক বিশ্বের সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত। কিন্তু প্রকৃতিতে দুর্লভ এবং খনি থেকে সেই মৌলের নিষ্কাশনের পদ্ধতি অত্যন্ত জটিল। তাই এর বহুল ব্যবহারের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাছাড়াও রাশি রাশি তামা, সোনা, আকরিক লোহাসহ নানা ধরনের বিরল মৌল রয়েছে দেশটির বিভিন্ন প্রদেশের মাটির নিচে।

ইকোলজিক্যাল ফিউচার্স গ্রুপ-এর প্রতিষ্ঠাতা বিজ্ঞানী ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ রড শুনোভার জানিয়েছেন, আফগানিস্তানের মাটির তলায় কী পরিমাণ ‘গুপ্তধন’ রয়েছে তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়। ব্যাটারি রিচার্জ করার জন্য জরুরি লিথিয়াম, তামা, অ্যালুমিনিয়াম ও নিওডিয়াম মৌল আছে সেখান। খনিজ লিথিয়াম সবচেয়ে বেশি মজুত রয়েছে এখন বলিভিয়ায়। আফগানিস্তানের ভাণ্ডার তার সঙ্গে পাল্লা দিতে পারে। আর এই খনিজগুলো ব্যবহার করে এক দশকের মধ্যেই এশিয়ার এই অঞ্চলের ধনীতম দেশ হয়ে উঠতে পারে আফগানিস্তান।

বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, আফগানিস্তানের ৯০ শতাংশই দারিদ্র্যপীড়িত। এই সব দুর্লভ ‘গুপ্তধন’ তোলার সক্ষমতা নেই দেশটির। আর এই খনিজ সম্পদই আফগানিস্তানের ব্যাপারে চীনকে বিশেষ আগ্রহী করে তুলেছে।

আরও পড়ুন : কাবুল থেকে ইউক্রেনের বিমান ছিনতাই, রুশ সংবাদ সংস্থার প্রতিবেদন

যদিও আফগানিস্তানে মজুদ লিথিয়ামের বিষয়টি একেবারেই এড়িয়ে গেছে চীন। চীন বলছে, তালেবানের সঙ্গে তাদের যোগাযোগের মূল লক্ষ্য পশ্চিমাঞ্চলীয় জিনজিয়াং অঞ্চলকে বেইজিংবিরোধী তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্টের (ইটিআইএম) হাত থেকে রক্ষা করা।

এ বিষয়ে সিচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক অধ্যয়নের অধ্যাপক ঝাং লি বলেন, তালেবানদের ব্যাপারে চীনের প্রাথমিক চিন্তা হলো, আফগানিস্তানে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মধ্যপন্থী শাসনব্যবস্থা গড়ে তোলা, যাতে আফগানিস্তানকে আশ্রয়স্থল হিসেবে ব্যবহার করে কেউ জিনজিয়াং বা এ অঞ্চলে সন্ত্রাস ছড়াতে না পারে। এর বাইরে চীনের অন্য কোনো হিসাবনিকাশ থাকলে তা হয়তো ভবিষ্যতে স্পষ্ট হবে।

তবে নয়াদিল্লিভিত্তিক সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের অধ্যাপক ব্রহ্ম চেলানি বলছেন ভিন্ন কথা।

তার মতে, খনিজসমৃদ্ধ আফগানিস্তানে কৌশলগত প্রবেশের জন্য নতুন প্রেক্ষাপটকে কাজে লাগবে চীন। আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রেও তার আফগানিস্তানকে দরকার হবে। তাই চীনের এতো আগ্রহ।

আরও পড়ুন ::

Back to top button

দয়া করে ওয়েবসাইটে বিজ্ঞাপনের অনুমতি দিন

দেখে মনে হচ্ছে আপনি কোনও বিজ্ঞাপন ব্লকার ব্যবহার করছেন। আমরা বিজ্ঞাপনের উপর ভরসা করি ওয়েবসাইটের ফান্ডের জন্য