এতদিন যে কথাটা ইনিয়ে বিনিয়ে দলের আর পাঁচটা নেতা বলছিলেন, এ বার সেই কথা পষ্টাপষ্টি করে বললেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। শনিবার গোয়ায় মমতা বলেছেন, কংগ্রেসের জন্য মোদীজি শক্তিশালী। কংগ্রেসই বিজেপিকে টিআরপি জোগাচ্ছে। তারা যদি সিদ্ধান্ত নিতে না পারে তা হলে দেশকে ভুগতে হবে, কেন তাদের জন্য দেশ ভুগবে?
এত বছর ধরে তারা তো সুযোগ পেয়েছে। প্রশ্ন উঠতে পারে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়? কেন বলছেন সে কথা! সেই প্রশ্নের উত্তর সন্ধানের আগে দেখে নেওয়া যাক এদিন আর কী বলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী? মমতা বলেছেন, ‘বাংলায় বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করার পরিবর্তে ওরা আমার বিরুদ্ধে লড়েছে। কী মনে করছেন আপনারা, এর পরেও কি আমি ওদের ফুল দিয়ে স্বাগত জানাব?’ গোয়ায় ভোট আসন্ন। তার আগে এদিন বিজয় সরদেশাইয়ের গোয়া ফরওয়ার্ড পার্টির সঙ্গে কথা বলেছেন তৃণমূল নেত্রী।
জোটের ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে বলেই খবর। পর্যবেক্ষকদের অনেকের মতে, মমতার উদ্দেশ্য এখন স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী লড়াইয়ে তিনি নেতৃত্ব দিতে চাইছেন। সেই সঙ্গে চাইছেন কংগ্রেস তাঁর নেতৃত্ব মেনে নিক। সেই কারণেই কংগ্রেসের সিদ্ধান্তহীনতা নিয়ে যেমন প্রশ্ন তুলছেন, তেমনই বোঝাতে চাইছেন এই দুর্বল কংগ্রেস বিজেপির মোকাবিলা করতে পারবে না। তা পারবে কেবল তৃণমূলই।
আরও পড়ুন : টিফিনের সময় দুষ্টুমি, দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রকে দোতলা থেকে ঝুলিয়ে রাখলেন প্রিন্সিপাল!
এই তত্ত্বের বিরুদ্ধ মতও রয়েছে অনেক বিশ্লেষকের। তাঁরা মনে করছেন, হতে পারে বিজেপির সঙ্গে আঁতাত করেই এমনটা করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিবিআই, ইডি সহ বহু মামলায় তৃণমূল নেতারা জর্জরিত। তা থেকে নিস্তার পেতে তলে তলে বিজেপিকে মদত করছে তৃণমূল। কারণ, সর্বভারতীয় স্তরে এখনও বিজেপির প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেসই। আড়াইশরও বেশি আসনে বিজেপির সঙ্গে মুখোমুখি লড়াই রয়েছে সাবেক দলের। মমতা নিশ্চয়ই বোঝেন যে এহেন কংগ্রেস তাঁর নেতৃত্ব মানবে না।
কিন্তু তা জেনেও আসলে কংগ্রেসকে দুর্বল করতেই নেমেছেন তিনি। দ্বিতীয় তত্ত্বের সঙ্গে কংগ্রেসের অনেকেই একমত। এদিন মমতার মন্তব্য নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন লোকসভায় কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী। তিনি বলেন, কংগ্রেসের সমর্থন ছাড়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায় মুখ্যমন্ত্রী হতে পারতেন না। সেই তিনি ক্ষমতায় এসেই কংগ্রেসকে ভাঙতে নেমে পড়েন। এমনই অকৃতজ্ঞ, বিশ্বাসঘাতক দল তৃণমূল। তাঁদের সঙ্গে রাজ্যস্তরে জোটের প্রশ্ন ছিল না, থাকবেও না।
অধীর চৌধুরী আরও বলেন, তৃণমূল আসলে রাজ্যে রাজ্যে টাকা ছড়িয়ে বিজেপি বিরোধী ভোটে ভাগাভাগি করতে চাইছে। যাতে বিজেপির সুবিধা হয়। ইডি, সিবিআই মামলা থমকে থাকে। এ সব খেলা বাচ্চা ছেলেরাও বুঝতে পারছে। কেউ বোকা নয়। তাঁর কথায়, একদা পেট্রল, ডিজেলের দামের বিনিয়ন্ত্রণের জন্য ইউপিএ ছেড়েছিল তৃণমূল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাস্তায় নেমেছিলেন প্রতিবাদ জানাতে। কেউ কি বলতে পারবে, এখন তেলের দাম একশ পারের পরেও রাস্তায় কেন নামেনি তৃণমূল কংগ্রেস?
সুত্র : দ্য ওয়াল