মৃত্যুর ৫২ বছর পর ইস্যু করা হয়েছে ডেথ সার্টিফিকেট, আদালতে ভর্ত্সনা
এটাও সম্ভব! মানুষের ডেথ সার্টিফিকেট নিয়েও জালিয়াতি। মৃত্যুর ৫২ বছর পর ইস্যু করা হয়েছে ডেথ সার্টিফিকেট। কীভাবে কোনও ব্যক্তির মৃত্যুর পাঁচ দশকের বেশি সময় পর ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করা হল, তা দেখে অবাক কলকাতা হাইকোর্টের বিরাচপতি। এ নিয়ে আধিকারিকদের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে আদালত। বছর দু’য়েক আগে এমনই এক ঘটনার সাক্ষী ছিল এই রাজ্য। তবে সেটা ছিল আরও তাজ্জব ব্যাপার।
এক ব্যক্তির মৃত্যুর ৮৫ বছর পর ইস্যু হয়েছিল ডেথ সার্টিফিকেট। যা নিয়ে তীব্র বিতর্ক দেখা দিয়েছিল। ১৯৩৩ সালে মৃত ব্যক্তির ডেথ সার্টিফিকেট সম্প্রতি ইস্যু করেছিল আউশগ্রাম-২ ব্লক প্রশাসন। আর ওই সার্টিফিকেটের বৈধতা নিয়ে শুরু হয়েছিল বিতর্ক। আউশগ্রামের সোয়াই গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন নিবারণচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। ১৯৩৩ সালে মারা যান তিনি। অর্থাত্ স্বাধীনতার প্রায় ১৪ বছর আগে মৃত ওই ব্যক্তির ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করতে ৮৫ বছর সময় লেগেছিল ব্লক প্রশাসনের।
আরো পড়ুন : ছাত্রীকে পড়াতে এসে টাকা-গহনা চুরি করতে গিয়ে পাকড়াও বাঁকুড়ার শিক্ষিকা
আর পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরের ধ্বজাধারী ভট্টাচার্যে ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করতে কেটে গেল ৫২ বছর। ধ্বজাধারী ভট্টাচার্য নামে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয় ১৯৬২ সালের ২৮ নভেম্বর। কিন্তু মৃত্যুর ৫২ বছর পর অর্থাত্ ২৭ জানুয়ারি, ২০১৪ তাঁর ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু হয়। এতদিন এ নিয়ে কারোর মাথাব্যাথ্যা না-হলেও সম্প্রতি সম্পত্তি সংক্রান্ত বিষয়কে কেন্দ্র করে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ল্যান্ড টেনেন্সি ট্রাইব্যুনালে’ ওই সার্টিফিকেট দাখিল হতেই শোরগোল পড়ে যায়।
পুরুলিয়ার জেলা শাসককে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলে ট্রাইবু্নাল। তদন্তের পর ডেথ সার্টিফিকেটটি বাতিলের নির্দেশ দেন জেলাশাসক। কিন্তু জেলাশাসকের ওই নির্দেশ চ্যালেঞ্জ করে আদালতের দ্বারস্থ হন ধ্বজাধারীবাবুর পরিবারের সদস্য দেবদাস ভট্টাচার্য।
আরো পড়ুন : চালকের সঙ্গে পরকীয়া! বিধায়ক চন্দনা বাউরির বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ
কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি রাজশেখর মন্থার এজলাসে মামলাটি উঠতেই ওই ব্যক্তির ডেথ সার্টিফিকেট যাবতীয় বৃত্তান্ত তুলে ধরেন সরকারি কৌঁসুলি নরেন ঘোষদস্তিদার ও আশিস গুহ। শুনানিতে তাঁরা জানান, ১৯৬২ সালে ধ্বজাধারী ভট্টাচার্য মারা যাননি। বরং তার পরও বেশ কয়েক বছর বেঁচে ছিলেন। এর স্বপক্ষে প্রামাণ তুলে ধরেন তাঁরা।
ধ্বজাধারী যে পঞ্চায়েত এলাকার অর্থাত্ রঘুনাথপুর(২)-এর অন্তর্গত মণ্ডল মনোতোষ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা ছিলেন সেখানকার নথি ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে ১৯৬৮ সালের ১৬ এপ্রিল তিনি পঞ্চায়েত অফিস থেকে রাজস্ব সংক্রান্ত একটি নথি সংগ্রহ করেছিলেন।
আরো পড়ুন : বজ্রবিদ্যুত্ সহ বৃষ্টির পূর্বাভাস কলকাতায়, ভাসবে উত্তরবঙ্গের এই পাঁচ জেলা
১৯৯০ সালেও ধ্বজাধারীবাবুর একটি ডেথ সার্টিফিকেট ইস্যু করা হয়েছিল। কিন্তু যে চিকিত্সক সেটি ইস্যু করেছিলেন তার কোনও হদিশ মেলেনি। রঘুনাথপুরের বিডিও তদন্ত করে দেখেছেন ১৯৭০ সালে ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছিল। সুতরাং সরকারি কৌঁসুলিরা দাবি করেন, ২০১৪ সালে ইস্যু হওয়া ওই ডেথ সার্টিফিকেটটি সঠিক নয়। এরপর ধ্বজাধারী ভট্টাচার্যের ডেথ সার্টিফিকেটটি বাতিল করার নির্দেশ দেন বিচারপতি।
পাশাপাশি জেলাশাসকের অফিস থেকে ডেথ সার্টিফিকেট নিয়ে কীভাবে এত বড় জালিয়াতির ঘটনা ঘটতে পারে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি।
সূত্র: এই মুহুর্তে